নিজস্ব প্রতিবেদক: লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতদের একজন মাদারীপুরের মিজান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা মিজানের মা, ভাই, বোন, স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। মিজানের পরিবারের একমাত্র দাবি, সরকার যেনও তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।
নিহত মিজানের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার মা রেকসনা বেগম। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরপর ঢাকা থেকে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন মাদারীপুরের কালকিনির মিয়ারহাটের বাবা বাড়িতে। এই অবস্থাতেই ধার-দেনা করে বড় ছেলে মিজান খানকে লেবাননে পাঠান দু’বেলা দু’মুঠো নিশ্চিন্তে খাওয়ার আশায়। লেবাননে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মিজানের নিহতের খবরে এই পরিবারে এখন শোকের মাতম।
মিজানের মা রেকসনা বেগম বলেন, যাদের জন্য আমরা সন্তান মারা গেছে, তাদের বিচার চাই। সরকারের কাছে একটাই দাবি তারা যেনও আমার ছেলের লাশটি অন্তত দেশে এনে দেয়। সরকার যেনও দায়িত্ব পালন করে।
মিজানের ছোট ভাই আব্দুর রহমান বলেন, বাবা আমাদের দেখাশোনা করতো না। মা-ই সব করেছেন। ঢাকায় কখনো কারখানায়, কখনো গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। এরপর অনেক টাকা ধার করে বড় ভাইকে বিদেশে পাঠান সংসারের সুদিনের আশায়। কিন্তু আজ আমাদের সেই অবলম্বনও হারিয়ে গেলো।
নিহত মিজানের মামা বজলুর রহমান বলেন, মিজানের মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে তাদের দাবি, মিজানের লাশটি যেনও অন্তত দেশে আনা হয়।
মাদারীপুরের কালকিনির শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল আলম মৃধা বলেন, মিজানের মৃত্যুর খবরে তার আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাদারীপুরের অনেক মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জীবিকা অর্জনের তাগিদে অবস্থান করছেন। তাদের যে কোন সমস্যায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে গভীর কষ্ট ও বেদনার অনুভূতি হয়। আমরা চেষ্টা করবো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই পরিবারকে কিছু সহযোগিতা করতে। সরকারের কাছে মিজানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, লেবাননে নিহত মিজানের তিন বছর বয়সী এক শিশু সন্তানও রয়েছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা নিহতের পুরো পরিবার।